রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত ও দোয়া বিস্তারিত জানুন
সূচিপত্র
রমজান মাসে রোজা ভূমিকাঃ
আমাদের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা হলো অন্যতম একটি স্তর। ঈমান, নামাজ ও যাকাতের পরই হল রোজার স্থান। আরবি ভাষায় রোজা কে ‘সাওম’ বলা হয়। যার অর্থ বিরত থাকা। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সাওম কে বলা হয় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে পানাহার, কোন রকমের খারাপ কাজ, থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে। এর জন্য রমজানের চাঁদ দেখার পর থেকে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহতালা বলেন,“হে ঈমান তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা হতে পারো”। [ সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩]।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা বিস্তারিত জানুন
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,“যে ব্যক্তি ঈমান সহ শোয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ গুলো মাফ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সোয়াবের আশায় শবে কদরের রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে তারও পূর্ববর্তী গুনাহ গুলো মাফ করে দেওয়া হবে”। [ বুখারী শরীফ ১/২৫৫, মুসলিম শরীফ১/২৫৯, মিশকাত শরীফ ১/১৭৩]। এর জন্য নিম্নে রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
রোজা রাখার ফজিলতঃ
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,“রোজার প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দেবেন”। [বুখারী শরীফ হাদিস ১৮৯৪], আল্লাহ তায়ালা রোজাদারকে কিয়ামতের দিন পানি পান করতে দিবেন। রোজা হল জান্নাত লাভের পথ। রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট নিশখের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত। রোজাদারদের দুটি আনন্দ ঘন মুহূর্ত হলো ইফতার এবং যখন রবের সঙ্গে মিলিত হবে। রোজা আমাদের অনেক ধরনের খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে। এর জন্য বলা যায় রোজা রাখার ফজিলত অতি গুরুত্বপূর্ণ।
রোজা রাখার নিয়মঃ
- রোজা রাখার জন্য ভরে ওঠে নিজেকে পাক পবিত্র এবং অজু করতে হবে।
- এরপর সেহরির সময় অল্প করে হলেও কিছু খেতে হবে।
- সেহরি করার সময় কোনরকম দেরি করা যাবে না, তা না হলে সুবহে সাদিক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
- সব ধরনের খারাপ কাজ এবং খারাপ কথা থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন: গীবত, মিথ্যা কথা বলা, সহবাস করা ইত্যাদি।
- গরিব, মিসকিন, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, এদেরকে দান সদকা করতে হবে।
- রোজা রেখে কোরআন শরীফ পড়া, আল্লাহ তায়ালার বেশি বেশি এবাদত করা, দুরুদ শরীফ পাঠ করা, সর্বদা আল্লাহর জিকিরে মহিবুল থাকা ইত্যাদি কাজগুলো করতে হবে।
- ইতিকাফ করা ইত্যাদি।
রোজা রাখার নিয়তঃ
রোজা পালনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নিয়ত। রোজা রাখার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে মনে মনে এবং অন্তর থেকে নিয়ত বাঁধতে হবে। এর জন্য রমজান মাসে রোজা রাখার নিয়ত নিম্নে দেওয়া হলঃ
উচ্চারণঃ “নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম”।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল এই রমজান মাসের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী”।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের নামাজের সঠিক নিয়ম - মেয়েদের নামাজের সঠিক নিয়ম জানুন
সেহরি করার পর উপরোক্ত দোয়াটি মনে মনে এবং বিশ্বাসের সাথে আল্লাহতালার ফরজ রোজা রাখার জন্য তেলাওয়াত করলে নিয়ত বাধা হয়ে যাবে। রোজা রাখার জন্য উপরোক্ত দোয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনারা যদি আরবি পড়তে না পারেন তাহলে বাংলা অর্থ পরড়ে নিয়ত করলেও হবে। কিন্তু সেটি অন্তর থেকে এবং বিশ্বাসের সাথে করতে হবে।
রোজা ভাঙ্গার কারণ সমূহঃ
- রোজা রাখা অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে ওষুধ সেবন করলে তার রোজা ভেঙ্গে যায়।
- রোজা রাখা অবস্থায় যদি বমি আসে এবং তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি খেয়ে নেই তাহলে সে ক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- রোজা রাখা অবস্থায় যদি নাসিকা দিয়ে রক্ত বের হয়ে মুখে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- কুলি করার সময় যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পেটের ভেতরে পানি চলে যায় তাহলেও রোজা কাজা করতে হবে।
- যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন ধরনের খাবার পানাহার করে তাহলে সে ব্যক্তির রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- বিড়ি সিগারেট এবং নেশা জাতীয় যেকোন দ্রব্য সেবন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
- রোজা রাখা অবস্থায় স্বামী যদি স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে সহবাস করে তাহলে রোজা কাজা করতে হবে। কোন নারীর লজ্জাস্থানে পশু লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url