শাবান মাসের ফজিলত - শাবান মাসের আমল
সূচিপত্র
শাবান মাসের ফজিলত এবং শাবান মাসের আমল ভূমিকাঃ
আমাদের বেশির বিভাগ মুসলমানেরা শাবান মাসের ফজিলত এবং শাবান মাসের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানে। শাবান মাসের অষ্টম মাস কে শাবান মাস হিসেবে ধরা হয়। এই শাবান মাসের ফজিলত এবং শাবান মাসের আমল এর গুরুত্ব আমাদের মুসলমান ভাইদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই মাসটিতে আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক প্রার্থনা এবং এবাদত করেছিলেন। সেহেতু হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এই শাবান মাসকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার জন্য এই শাবান মাসের গুরুত্ব থাকাটা বেশ প্রয়োজনীয়।
শাবান মাসের ফজিলতঃ
আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অষ্টম মাস হলো শাবান মাস। এই অষ্টম মাসে শাবান মাসের ফজিলত এবং আমল রয়েছে। সাবান মাসের আমলগুলো নফল আমল নামে পরিচিত। তবে এই নফল আমলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। কিয়ামতের ময়দানে যদি কোন ব্যক্তির ফরজ আমল এর কোন কম থাকে তাহলে ফরজ আমল বেশি করার জন্য নেক আমল থেকে কিছু আমল নিয়ে তা পূরণ করে দেওয়া হবে। এর জন্য আপনাদের এই মাসে বেশি বেশি আমল করতে হবে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) বলেছিলেন রাসূল (সাঃ) শাবানের সম্পূর্ণ মাস রোজা রাখতেন।হযরত মুহাম্মদ সাঃ রোজা রাখতেন অল্প কয়েকদিন পর্যন্ত। তবে তিনি শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত করতে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি করে তার বান্দাদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করতেন। ইসলামের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রজব মাস হল আল্লাহ তায়ালার মাস ও শাবান মাস হল হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর মাস এবং রমজান মাস হল উম্মতের মাস।
আরো পড়ুনঃ শাবান মাস সম্পর্কে হাদিস - শাবান মাসের দোয়া
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম আমাকে বলেছেন ‘‘হে বৎস! যদি পারো এভাবে সকাল সন্ধ্যা পার করো যেন তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা না থাকে,তবে তাই করো’’ তারপর বলেন ‘‘এটাই আমার সুন্নত এবং আদর্শ, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত অনুসরণ করলো সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালবাসল, যে আমাকে ভালবাসলো সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে’’। [তিরমিজি শরিফঃ৩৬]
রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য শাবান মাসে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা একটি সুন্নত কাজ। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’’[ সিলসিলাতুস সহিহাহ] নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত, নতুন চাঁদ দেখার সুন্নত, চন্দ্র মাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। ইসলামের তারিখগুলো বিশেষভাবে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর হয়ে থাকে। এর জন্য শাবান মাসের ফজিলত এবং আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শাবান মাসের আমলঃ
আমরা যারা মুসলমান ভাই ও বোনেরা আছি তারা যদি শাবান মাসের আমল সম্পর্কে জেনে থাকি তাহলে শাবান মাস আসলে আমরা খুব সহজেই শাবান মাসের আমলগুলো করতে পারব। এই শাবান মাসের আমলগুলো করলে অনেক বেশি নেকি পাওয়া যায়। তবে শাবান মাসের রোজা এবং আমলগুলো ফরজ নয় বরং এগুলো সুন্নত কাজ। তবে শাবান মাসের অনেক ধরনের কাজ আছে যেগুলো করলে আপনি আল্লাহ তাআলার নিকট্য লাভ করতে পারবেন এবং বেশি বেশি নেকি অর্জন করবেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই শাবান মাসে নফল রোজা রাখতেন এবং সাহাবীগণদের কে নফল রোজা রাখার জন্য উৎসাহ দিতেন। অন্যান্য যে কোন মাসের তুলনায় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত এবং নফল রোজা করতেন। রমজান মাসের রোজা সকল মুসলমানদের উপর ফরজ রোজা হিসেবে ঘোষিত করা হয়েছে। এই এই ফরজ রোজা করার পাশাপাশি হযরত মুহাম্মদ সাঃ সাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা করতেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করতেন।
শাবান মাসের গুরুত্বঃ
শাবান মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এই পবিত্র শাবান মাসে মুসলমানদের রমজান মাস শুরু হয়। শাবান মাস এমন একটি মাস যেই মাসে হযরত মুহাম্মদ সাঃ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই শাবান মাসটির রাত শক্তিশালী রাত হিসেবে ধরা হয়। আল্লাহ তাআলা এই শাবান মাস আমাদের আশীর্বাদের রাত হিসেবে দিয়েছেন। মুসলমানরা এই শাবান মাসে খাদ্য ও সরবরাহের মজুদ রাখতে এবং রোজার মাসের কঠোরতার জন্য শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করে।
তাছাড়াও প্রত্যেকটি মুসলমান ব্যক্তি এই সাবান মাসকে তাদের জীবনের প্রতিফলন এবং রমজান মাসের সময় আত্ম উন্নতির পরিকল্পনা করার জন্য একটি সময় হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। যদিও সাবান মাস ইসলামিক ক্যালেন্ডার এর সবচেয়ে সুপরিচিত বা প্রচারিত মাস গুলির মধ্যে একটি নয় তবুও এটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত করে। শাবান মাসে বিশেষ করে মুসলমানরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষভাবে এবাদত করতে থাকে।
এর জন্য আপনাকে সাবান মাস সম্পর্কে হাদিস এবং শাবান মাসের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখতে হবে। কারণ সাবান মাস সম্পর্কে হাদিস জানা থাকলে আপনিও আল্লাহতালার এবাদত এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করতে পারবেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের বা পুরো বিশ্বের আলেমগণরা শাবান মাস সম্পর্কে হাদিস গুলো সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে এবং জানানোর চেষ্টা করে। এর জন্য আপনাকেও শাবান মাস সম্পর্কে হাদিস গুলো জেনে রাখতে হবে।
শাবান মাসের রোজাঃ
আপনারা যদি শাবান মাসের ফজিলত এবং শাবান মাসের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে পারেন তাহলে এবার আপনাকে জানতে হবে শাবান মাসের রোজা কয়টি। কোন বান্দা যদি শাবান মাসে রোজা কোন সমস্যার কারণে রাখতে না পারে তাহলে তাকে রমজান মাসের পর ফরজ রোজা করার পর শাবান মাসের রোজাগুলো করতে হবে। শাবান মাসে রোজা গুলো রমজান মাসের পর পালন করা ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয়।
এক সাহাবী হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এই মাসের মধ্যভাগে কিছু রোজা রেখেছিলে? কে বলল, না। হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন তুমি তারপরে রমজানের রোজা শেষ করে দুটি রোজা রাখবে। [সহীহ মুসলিমঃ২৬৪২] এর জন্য আপনাকে সাবান মাস শেষে রমজান মাস শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে শাবান মাসের রোজা রাখার প্রয়োজন নেই।
আপনি কোন সমস্যায় যদি শাবানা রোজা করতে না পারেন তাহলে রমজানের রোজাগুলো পর শাবান মাসের রোজাগুলো করে নিতে পারবেন।আবার অন্য একটি হাদিসে মাসের অর্ধেক হলে রোজা রাখা নিষেধ করা হয়েছে। এবং এই দিনগুলোই রমজান মাসের রমজানের রোজা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি কোন ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহের সুন্নত রোজা পালন করে থাকে সেই ব্যক্তি এর ধারাবাহিকতায় এ রোজাগুলো পালন করতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালের রোজা কি মাসে - ২০২৩ সালের রমজানের ক্যালেন্ডার
হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন,‘‘শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হলে তোমরা রোজা রাখবে না”।[ সুনানে আবু দাউদঃ২৩৩৭] এর জন্য আমাদের উচিত সময়মতো শাবান মাসের রোজা গুলো করে ফেলা এবং শাবান মাসের রোজা শেষে রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url