কোরবানি সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস জেনে নিন
সূচিপত্র
কোরবানি সম্পর্কে আয়াত
প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো অনেকেই কুরবানী সম্পর্কে আয়াত জানেন না। আমাদের সকলেরই উচিত কোরবানি সম্পর্কে আয়াত গুলো জেনে রাখা। তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কোরবানি সম্পর্কে আয়াত বিস্তারিত আলোচনা করব। নিম্নে কোরবানি সম্পর্কে আয়াত দেওয়া হল।
মহান আল্লাহতালা কুরআনে বলেছেনঃ
আরো পড়ুনঃ কোরবানির ঈদ ২০২৩ - কোরবানির করনীয়
উচ্চারণঃ “ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামি”
অর্থঃ ‘আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য’। ( সূরা আনআমঃ আয়াত ১৬২ )
অর্থঃ ‘আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কোরবানির পেশ করিল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হইল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হইল না। সে বলল, অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করিব। অন্যজন বলল, আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’। ( সূরা মায়েদাঃ আয়াত ২৭ )
অর্থঃ ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে তারা আল্লাহ তাআলার নাম স্মরণ করিতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার ওপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ, অতএব তারই কাছে আত্মসমর্পণ কর আর অনুগতদের কে সুসংবাদ দাও’। ( সূরা আল-হজ্জঃ আয়াত ৩৪ )
অর্থঃ এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তার কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমন ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো, এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন। সুতরাং হে নবী আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন। ( সূরা আল-হজ্জঃ আয়াত ৩৭ )
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর কোরবানি
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ঈদগাহে কোরবানির পশু জবেহ করতেন এবং নর করতেন। (বুখারী, হাদিস-২/৮৩৩)
অতএব পরিশেষে বলা যায় পশু কোরবানি দেওয়ার নিয়ম হল- গরু, ছাগল ও দুম্বা এবং উট এর মধ্যে নর উট কোরবানি দেওয়া যায়। আপনারা সবাই হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নিয়ম অনুযায়ী কোরবানি দেবেন এতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
কোরবানির পশু জবেহ করনে হাদিস
হযরত সাদ্দাদ ইবনে আওছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বলেন, আল্লাহ তাআলা সব কিছুর উপর অনুগ্রহ অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা পশু জবেহ করবে, তো উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ করবে। প্রত্যেকে তার জবেহ করার ছুরিতে ধার দেবে এবং তার পশুকে শান্তি দেবে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস-২/১৫২)
পশুর বয়স সম্পর্কে হাদিস
হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, হাদিসের আসল হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন, তোমরা কোরবানিতে ‘মুছিন্না’ ছাড়া জবেহ করবে না। তবে সংকটের অবস্থায় ছয় মাস বয়সী দুম্বা বা ভেড়া জবেহ করতে পারবে।(সহীহ মুসলিম, হাদিস- ২/১৫৫)
তবে আপনারা যারা কোরবানি দেওয়ার জন্য পশু বাছাই করার ক্ষেত্রে উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। এবং গরু মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। ভেড়া, ছাগল এবং দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। তাহলে এই বয়সি পশুদের কোরবানি দেওয়া যাবে। আবার উপরের হাদিস অনুযায়ী ভেড়া এবং দুম্বা ছয় মাস বয়স হলেও কোরবানি দেওয়া যাবে।
কোরবানি করার সময় এবং গোস্ত সংরক্ষণ নিয়ে হাদিস
হযরত বারা ইবনে আজিজ রাঃ বলেন, আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন এবং তাতে বললেন, আমাদের এই দিবসে কোরবানির দিনে প্রথম কাজ নামাজ আদায় করা, এরপর কোরবানি সম্পন্ন করা। সুতরাং যে এভাবে করবে তার কোরবানি আমাদের তরিকা পদ্ধতি মত হবে। আর যে আগেই জবেহ করেছে তার কোরবানি তরিকা মত হয়নি, অতএব তা পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত গোস্ত, জন্য উৎসর্গিত কোরবানি নয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস- ২/৮৩২)
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা বিস্তারিত জানুন
কোরবানির গোশত সংরক্ষণ নিয়ে হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত, হাদিসে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাত পর কোরবানির গোশত খেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর তিনি অবকাশ দিয়ে বলেন, খাও, পাথেয় হিসেবে সাথে করে নাও এবং সংরক্ষণ করে রাখো। (সহীহ মুসলিম, হাদিস- ২/১৫৮)
উম্মুল মুমিনিন মা আয়েশা (রাঃ) এর এক বর্ণনায় আছে যে, খাও সংরক্ষণ করো এবং সদকা কর।( সহীহ মুসলিম, হাদিসঃ ২/১৫৮ )
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় আমাদের সকলেরই উচিত সঠিক সময়ে কোরবানি দেওয়া এবং সঠিকভাবে গোশত সংরক্ষণ এবং বন্টন করা। তবে শুধু নিজের জন্য কোরবানির গোশত রেখে দিলে হবে না গরিব দুঃখী এবং আত্মীয়-স্বজনদেরও কোরবানির গোশত সমান ভাবে বন্টন করতে হবে। তাহলেই আল্লাহ তাআলা কোরবানি গ্রহণ করবেন।
কোরবানি বিষয়ে হাদিস
কোরবানির পশু ক্রয় করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েজ নয়। উপকৃত হলে তার সমপরিমাণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগিরিঃ ৫/৩০০)
শেষ কথাঃ কোরবানি সম্পর্কে আয়াত
আশা করি আপনারা সকলেই কোরবানি সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস বুঝতে পেরেছেন। আমাদের সমাজে অনেক মুসলমান ভাই বোনেরা আছে যারা কোরবানি ই সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস না মেনে কোরবানি দেওয়ার পর অনেক ভুল-ভ্রান্তি করে থাকে। তাই আমাদের সকলেরই উচিত কোরবানি সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস মেনে কোরবানি দিতে হবে। আমাদের এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url