অতিরিক্ত প্রিয়ড হওয়ার কারণ - অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত প্রিয়ড হওয়ার কারণ
অতিরিক্ত প্রিয়ড হওয়ার কারণ
আমাদের এই দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মেয়েরা মাসিক বিষয়ক নানা ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকে। এমনকি এই সমস্যাটা দিন দিন অতিরিক্ত বেড়েই চলেছে। মাসিকের এই সুস্থ চিকিৎসার অভাবে অনেক মেয়েরা ক্রনিক অ্যানিমিয়া সহ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এখনও এ রোগের সঠিক নির্ণয় পদ্ধতি উন্নত না হওয়া এবং সচেতনতা না পারার কারণে এখন এ ধরনের রোগ বেশি ধরা পড়ছে। অতিরিক্ত প্রিরিয়ড হওয়ার কারণ এ অনেক নারী কিশোরী মারাও যাচ্ছেন।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা অপকারিতা - ভিটামিন ই জাতীয় খাবার
এই ধরনের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি কিশোরী এবং ৪০ বছরের বেশি বয়সী মহিলারা ভুগে থাকেন। কেননা, যুবতী বয়সে মাসিক শুরুর সময় এবং ৪০ বছর বয়সের পর মেনোপজের আগে শরীরে সাময়িক ভাবে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্ট্রেরণ হরমোনের তারতম্য হয়ে থাকে। মূলত এই র কারণে অতিরিক্ত ব্লেডিং বা মাসিক হয়ে থাকে। নিম্নে আরো কিছু পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লেডিং হওয়ার কারণ দেওয়া হলঃ
- জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা টিউমার থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত মাসিকের চাপের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।
- ওভারিতে কোন ধরনের সমস্যা থাকলে তাতে ঠিকমতো ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় না। এই কারণে প্রোজেস্ট্রেরণ উৎপাদন কমে গিয়ে অতিরিক্ত মাসিকের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- জরায়ুর এন্ড্রমেট্রিয়ামের সমস্যার দেখা দিলে অতিরিক্ত মাসিক হয়।
- গর্ভপাতের কারণে।
- জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্ট্রা ইউটের আইন ডিভাইস ব্যবহার করলে তার পার্শ্ব প্রতিকার কারণে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- রক্তের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত হেভি ব্লেডিং হয়।
- লিভার ও কিডনির বিভিন্ন ধরনের অসুখ থাকলেও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- হঠাৎ করে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য বাড়ার কারণেও অতিরিক্ত মাসিকের সম্মুখীন হতে হয়।
- আবার হঠাৎ করে শরীর কমে গেলে অর্থাৎ পাতলা হয়ে গেলে অতিরিক্ত ব্লিলিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়।
- কারো যদি থাইরয়েডের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব বা মাসিক হয়।
- অতিরিক্ত শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের কারণেও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- ইউটেরাস ও সারভিক্সের ক্যান্সার হলেও এ ধরনের অতিরিক্ত ব্লেডিং এর সমস্যায় পড়তে হয়।
পরিশেষে বলা যায় আশা করি আপনারা অতিরিক্ত প্রিয়ড হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত কারণগুলোর কারণেই অতিরিক্ত পিরিয়ডের সৃষ্টি হয়। এর জন্য আপনাদের আশেপাশে যত অল্প বয়সী মেয়েরা এবং ৪০ বয়সের মধ্যে মেয়েরা আছে তাদের অতিরিক্ত প্রিয়ড হওয়ার কারণ গুলোর সম্পর্কে জানিয়ে দিন। তাহলে সবাই সচেতন হয়ে যেতে পারবে। এবং অতিরিক্ত পিরিয়ড থেকে বাঁচতে পারবে।
মাসিক বা ঋতুস্রাব এ ব্লিডিং কম হওয়ার কারণ
আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রিয়ড হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি। তবে আমাদের দেশের অনেক মেয়েরা আছে যাদের মাসিক বা ঋতুস্রাবে ব্লিডিং কম হয়ে থাকে। আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে মাসিক বাড়িতে স্রাব এ ব্লেডিং কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম্নে তা দেওয়া হলোঃ
- অনেক বেশি টেনশন এর মধ্যে বা স্ট্রেস এর মধ্যে থাকলে পিরিয়ডের সময় ব্লেডিং এর মাত্রা অতিরিক্ত কমে যায়,যার ফলে মাসিকে ব্লিডিং কম হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার দেখা দেয়।
- যে সকল কিশোরীদের বা মহিলাদের স্টোরিজেন হরমোনের মাত্রা অতিরিক্ত কম থাকে তখন পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণ কম হয়। এই ধরনের কারণ মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোন জরায়ুর ভেতরে পুরুষত্ব বাড়ায়। আবার অতিরিক্ত শরীর চর্চা বা বিভিন্ন ধরনের খারাপ কিছু খাওয়ার পরেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
- যেসব নারীদের বা মহিলাদের রক্তস্বল্পতার বা রক্তশূন্যতার দেখা দেয় মূলত তাদের মাসিকের সময় ব্লেডিং কম হয়ে থাকে। রক্তে যদি ফ্লো বেশি থাকে তাহলে ব্লেডিং ভালোভাবে হয়। তাই বলা যায় রক্তশূন্যতার কারণে ও ব্লিডিং কম হয়।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা যারা নিয়মিত করে তাদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় বা পিরিয়ডের সময় ব্লিডিং কম হয়ে থাকে। আবার অনেক মহিলা বা নারীরা আছে যাদের মাসিক বা পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লেডিং হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ব্লিডিং বন্ধ হওয়ার ওষুধ
আপনারা মেয়েদের মধ্যে অনেক জন আছেন যারা অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সমস্যায় ভুগে থাকেন। এরপর আপনারা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খুঁজে থাকেন। আবার অনেকে আছে যারা আমাদের কাছে ওষুধের নাম জানতে চান বা ওষুধ সম্পর্কে জানতে চান। তবে আপনাকে সর্বপ্রথম যদি অতিরিক্ত ব্লাডিং হয়ে থাকে তাহলে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে তার আগে যদি আপনি কোন ধরনের ওষুধ খান তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন করতে হবে। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আরো পড়ুনঃ চুলে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম - মুখে ই ক্যাপসুলের ব্যবহার
আমরা আপনাদের ইতিমধ্যে উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে ব্লেডিং কম হওয়ার এবং বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি। যদি উপরোক্ত কারণগুলো আপনারা এড়িয়ে চলতে পারেন এবং নিয়ম মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার মাসিক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। অতিরিক্ত ব্লেডিং বন্ধ হওয়ার তেমন কোন ওষুধ নেই কিন্তু অতিরিক্ত ব্লেডিং বন্ধ হওয়ার বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ
- সর্বপ্রথম আপনাকে একটি ভাল ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- অতিরিক্ত ব্লেডিং এর সমস্যা হলে আপনারা ঘরে গরম পানির মধ্যে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার নিয়মিত আদা চা পান করতে পারেন। এছাড়াও অ্যালোভেরা জেল এ সময়ে বিভিন্ন উপকারে কাজে আসে।
- প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি এবং ফলমূল সহ আয়রন জাতীয় খাদ্য মজুদ রাখতে হবে এবং খেতে হবে।
- প্রতিদিন আপনার নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে এক্ষেত্রে আবার অতিরিক্ত শরীর চর্চা করতে যাবেন না।
- নিজেকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। অতিরিক্ত মাসিকে বেশি ব্লাডিং হলে ওষুধ না খেয়ে উপরোক্ত ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো মেনে চলুন।
অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
আমাদের দেশে অনেক নারীরা আছে যারা অতিরিক্ত মাসিক হওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকে। সাধারণত অনেক নারীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যাটি দেখা দেয়। এর জন্য আমাদের মেয়েদের উচিত অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখা উচিত। নিম্নে অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার কিছু ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলোঃ
কাঁচা পেঁপের ব্যবহার
কাঁচা পেপের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। যেসব মেয়েদের নিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা কাঁচা পেঁপে নিয়মিত খেতে পারেন। যারা অতিরিক্ত মাসিক এর সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেতে থাকুন দেখবেন মাসিক সঠিক সময়ে এবং নিয়মিত হচ্ছে। তবে মাসিক চলাকালীন কাঁচা পেঁপে খাওয়া যাবে না।
দারুচিনির ব্যবহার
দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান। যাদের প্রতিনিয়ত অনিয়মিত পিরিয়ড এর সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত চা এর সাথে বা লেবুর রসের সাথে দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে নিয়মিত মাসিক হতে সাহায্য করবে। আবার দারুচিনি খেলে অতিরিক্ত পিরিয়ডের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কাঁচা হলুদের ব্যবহার
আমরা বিভিন্ন ধরনের রান্নার ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে কাঁচা হলুদের গুনাগুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করতে কাঁচা হলুদের গুরুত্ব অপরিসীম। তেমনি ভাবে কাঁচা হলুদ মাসিক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কাঁচা হলুদ খাওয়ার ফলে যাদের অতিরিক্ত পিরিয়ড হয় তাদের জরায়ুর মাংসে বেশি সংকোচন প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করতে এতে থাকা এন্ট্রি ইনফ্লেমেন্টরি গুণ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
আমরা সকলে জানি শরীর চর্চা আমাদের শরীর কে এবং মনকে অনেক ভালো রাখে এবং সুস্থ রাখে। আপনি যখন দেখবেন নিয়মিত মাসিক হচ্ছে না বা অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ হচ্ছে না তখন আপনি ভেবে নিবেন সেটি আপনার মানসিক চাপের জন্য। এর জন্য মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত শরীর চর্চা করুন। এতে নিয়মিত মাসিক হয়।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার
অ্যালোভেরা জেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একটি ভিটামিনযুক্ত উপাদান। অ্যালোভেরা জেল এর মাধ্যমে আমাদের ত্বক এবং শরীর চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি দিতে এলোভেরা বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য প্রতিদিন সকালে নিয়মিত এলোভেরার রসের সাথে মধু যুক্ত করে খেতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url