কিডনি পাথরের লক্ষণ - কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আপনাদের ভেতরের অনেকে আছে যাদের কিডনিতে পাথর হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন জানেন না কিডনি পাথরের লক্ষণ এবং কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না। তাই আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে কিডনি পাথরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
সূচিপত্রঃ কিডনি পাথরের লক্ষণ
ভূমিকা
আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা কিডনির সমস্যায় ভোগে। অনেক মানুষের কিডনিতে সময়ের সাথে সাথে পাথর হতে থাকে। এই পাথর কেন হয় এবং কিভাবে হয় তা আমরা সঠিকভাবে জানিনা। মূলত এই ধরনের পাথর বিভিন্ন ধরনের ভেজাল খাবারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আবার খাবার অনিয়মের কারণেও এই কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে। অনেক মানুষ আছে যারা কিডনি পাথর নিয়ে মারা যায়। কিডনিতে পাথর হলে এটি একটি অনেক বড় ধরনের সমস্যা। যদি কিডনিতে ছোট পাথর হয় তাহলে সেই রকম বড় ধরনের কোন সমস্যা হয় না যদি সময়ের সাথে সাথে কিডনির পাথর বড় হয়ে যায় তাহলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় - ওসিডি কেন হয়
শরীরের সমস্যা প্রথমে দেখা না দিলেও কিডনিতে পাথর বড় হওয়ার পর সেটি বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর জন্য সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে কিডনি পাথরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব যা আপনাদের জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনি পাথরের লক্ষণ
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণগুলো বিস্তারিত জানাবো। কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণগুলো যদি আপনারা জেনে রাখেন তাহলে আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে পারবেন এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনাকে কোন ধরনের বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হবে না। চলুন নিম্নে জেনে নেই কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণগুলোঃ
প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা
আপনাদের কিডনিতে যদি পাথর হয়ে থাকে তাহলে প্রস্রাব করার সময় অনেক বেশি জালে পড়া এবং ব্যথা করতে থাকবে। এমন অনুভব যদি হয় তাহলে তাৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
পেটে, পিঠে বা পেটের পাশে ব্যথা করা
সাধারণত কিডনির পাথরের ব্যথাকে রেনাল কলিকও বলা হয়ে থাকে। কিডনির পাথরের ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয়ে যায়। কিডনির ভেতরে হওয়া পাথরগুলো যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নড়াচড়া করে তখন ব্যথার জায়গাও পাল্টে যায়। এক্ষেত্রে পেটে, পিঠে অথবা পেটের পাশে ব্যথা করতে পারে।
প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া
যদি আপনার প্রস্রাবে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় তাহলে সেটি কিডনির পাথর বা মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ হওয়ার লক্ষণ। এই ধরনের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
প্রসবের সাথে রক্ত বের হওয়া
মাত্রতন্ত্রে পাথর হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হওয়া। সাধারণত এই লক্ষণকে হিমাচুরিয়াও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত এই রক্তের কালার লাল, গোলাপি অথবা বাদামি কালারও হতে পারে। আপনি যদি এই ধরনের লক্ষণ দেখতে পান তাহলে নিকটস্থ কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব অথবা জ্বর হওয়া
আপনার কিডনিতে যদি কোন ধরনের পাথর হয় অথবা কোন রোগে আক্রমণ করে তাহলে হঠাৎ জ্বর আসতে পারে। শুধু যে কিডনিতে পাথর হয়েছে বলে জ্বর আসবে সেটি নয় অন্যান্য কারণেও শরীরে জ্বর আসতে পারে। এর জন্য শরীরে জ্বর আসার পাশাপাশি যদি পাশে ব্যথা করে তাহলে জরুরী ভাবে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
কিডনি পাথরের সাইজ
প্রিয় পাঠক আমরা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে কিডনি পাথরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি। এবার আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনি পাথরের সাইজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিম নেতা দেওয়া হলোঃ
আমাদের শরীরে থাকার কিডনিতে সাধারণত মূত্র বের হওয়ার দুটি পাইপ থাকে। যখন সেই পাইপ দিয়ে প্রস্রাব বের হয় সাধারণত সেই প্রস্রাবের সাথে কিডনির পাথর বের হয়ে থাকে। উক্ত পাইপ এর গঠন অনুযায়ী কিডনিতে হওয়া পাথর গুলো বের হতে থাকে। সে পাইপ অনুযায়ী কিডনির পাথর ১ মিলিমিটার, ২ মিলিমিটার, 4 মিলিমিটার আবার ৫ মিলিমিটারের ও বেশি বড় হতে পারে।
কিডনি পাথর গলায় কোন খাবার
প্রিয় পাঠক আমাদের দেশে অনেক ধরনের খাবার আছে যেগুলো কিডনি স্টোন এর জন্য অত্যন্ত উপকারী খাবার। উপকারী খাওয়ার গুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আপনার রাখা উচিত। নিম্নে কিডনি পাথর গলায় এমন খাবার গুলোর তালিকা দেওয়া হলোঃ
আরো পড়ুনঃ টিবি রোগের লক্ষণ - টিবি রোগের প্রতিকার
সাইট্রাস ফল
সাইট্রাস ফল সাধারণত সাইট্রিক এসিড দ্বারা সমৃদ্ধ খাদ্য যা আমাদের শরীরে কিডনিতে হওয়া পাথর গুলো ভাঙতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফল গুলো হলো-টমেটো, কমলা, বাদাম, জাম্বুরা ও লেবু। এই খাবারগুলো প্রতিদিন নিয়ম মেনে খান। তাহলে দেখবেন কিডনি পাথর গলে গিয়েছে।
পানি পান
প্রতিনিয়ত এবং নিয়মিত পানি পান করা কিডনি পাথর দূর করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যদি দিনে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করেন তাহলে কিডনির পাথর বেরিয়ে যায়। আপনারা দৈনিক অন্তত আর্ট গ্লাস পানি পান করতে পারেন। এতে শরীর ও কিডনি ভালো থাকবে।
বেরি জাতীয় খাদ্য
বেরি জাতীয় খাদ্যে সাধারণত ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ সমৃদ্ধ থাকে। এই খাবারগুলো সাধারণত কিডনিকে বিভিন্নভাবে প্রতিহার থেকে রক্ষা করে। বেরি জাতীয় খাবারের মধ্যে স্ট্রবেরি, রাম্পবেরি এবং ব্লুবেরি খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এ ধরনের খাবারগুলো রাখুন এবং নিজে খান।
শাক-সবজি খাওয়া
আপনারা দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় গাঢ় শাকসবজি রাখতে পারেন এর মধ্যে পালং শাক অন্যতম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। যেটি আপনার শরীরে কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে। এর জন্য প্রতিদিন গাঢ় শাকসবজি খাদ্য তালিকায় রাখুন।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় উপরোক্ত খাদ্য তালিকার মাধ্যমে আপনি আপনার কিডনির পাথর হওয়া থেকে কিডনিকে রক্ষা করতে পারবেন। শুধুমাত্র আপনাকে সেগুলো অর্থাৎ উপরোক্ত খাদ্যগুলো নিয়ম মেনে খেতে হবে।
কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবে না
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদের কিডনি পাথরের লক্ষণ, কিডনি পাথরের সাইজ, কিডনিতে পাথর হলে কি কি খাবার খেতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবার আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবেনা সেই সম্পর্কে জানাবো। নিম্নে কিডনিতে পাথর হলে কি খাওয়া যাবেনা দেওয়া হলোঃ
- সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
- উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার
- বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার
- ক্যাফেইন এবং সোডা জাতীয় খাদ্য
- অক্সলেট সমৃদ্ধ খাবার
- অ্যালকোহল
- অ্যাসপ্যারাগাস জাতীয় খাবার
- হেরিং জাতীয় ছোট মাছ
- ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি খাদ্য
কিডনি পাথর অপারেশন খরচ কত
প্রিয় পাঠক আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনি পাথর অপারেশন খরচ কত সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। আপনারা হয়তো অনেকেই কিডনি পাথর অপারেশন খরচ কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তাই এই আর্টিকেলে কিডনি পাথর অপারেশন খরচ কত নিম্নে দেওয়া হলোঃ
আরো পড়ুনঃ যক্ষা রোগের লক্ষণ - যক্ষা থেকে বাঁচার উপায়
বাংলাদেশে বর্তমানে কিডনি পাথর রিমুভ করার পদ্ধতি অনেক সস্তা। বিভিন্ন হাসপাতালের প্রকারভেদে কিডনি থেকে পাথর অপারেশনের খরচ ১৫ হাজার টাকা হতে পারে। আর যদি অ্যান্ডোস্কোপিক হয় তাহলে এর চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল। আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন এর খরচ এর ভিন্নতা রয়েছে তেমন আমাদের দেশেও এর অপারেশনের খরচের ভিন্নতা রয়েছে।
এক্ষেত্রে আমরা যদি বাইরে থেকে ফুটো করে অপারেশন করি সেই ক্ষেত্রে বড় সেন্টারগুলোতে প্রায় এক লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। এর জন্য বাংলাদেশে এখন অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে কিডনি পাথরের অপারেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সেজন্য আর বাইরের দেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ইউরোপ অথবা যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের সার্জারি করা হয় এখন বাংলাদেশেও একই রকম সার্জারি করা হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url