পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস
সূচিপত্র
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আমরা সকলের মুসলমান ঘরের সন্তান। মুসলমান হিসেবে আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে থাকে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার এবাদতের জন্য এবং নবী রাসূলগণের দেখানো পথে চলার জন্য। আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন আমাদের এই পুরো পৃথিবী। এবং তার মহিমা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন এই পৃথিবীটি। মহান আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে তৈরি করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে এই পৃথিবীতে অনেক নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা বিস্তারিত জানুন
নবী রাসুলগণকে পাঠিয়েছেন তার কারণ হলো মানুষ যেন সঠিক পথে চলতে পারে এবং নবীগণরা যেন মানুষকে সঠিক পথে আনতে পারে। নবী রাসুলগণের যুগ থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদেরকে ফরজ করে দিয়েছেন মহান আল্লাহতালা। আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মশগুল থাকলে আমাদের মন এবং চলাফেরা সকল কিছু ভাল থাকে। আমরা অনেকেই আছি যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি আবার অনেকেই আছি যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি না। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে তারা অবশ্যই নামাজ পড়ার শাস্তি সম্পর্কে জানেন।
আপনারা যারা নামাজ পড়েন না তারা হয়তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি জানেন না। তাই আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস জানার পর আপনার জীবনে পরিবর্তন আনবে। এই পোষ্টের মাধ্যমে আল্লাহতালার পথে আপনার মনকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস
প্রিয় পাঠক আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস বিস্তারিত জানব। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি বড়ই কঠিন। যেটি কল্পনা করলেও আমাদের শরীর শিউরে ওঠে। তাই চলুন নিম্নে জেনে নিই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তিগুলোঃ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে মৃত্যুর সময় যেই তিনটি শাস্তি দেওয়া হবে তা নিচে দেওয়া হলঃ
- বেনামাজি ব্যাক্তি ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন।
- নামাজ না পড়া ব্যক্তি মৃত্যুর সময় জিল্লতি ও অপমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করবে।
- বেনামাজি ব্যাক্তি পিপাসার্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে কবরে যে তিনটি শাস্তি দেওয়া হবে তার নিচে দেওয়া হলঃ
- মৃত্যুর পর কবর এমন সংকীর্ণ ভাবে যে মৃত ব্যক্তির এক পাশের হাড় অন্যপাশের হাড়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
- বেনামাজির কবরে সব সময় আগুন জালানো থাকবে।
- বেনামাজি ব্যক্তির কবরে কেমন এক ধরনের বিষাক্ত সাপ দিয়ে দেওয়া হবে যে সেই সাপের চোখ আগুনের মত এবং নখগুলো লোহার মতো হবে। সে বিষাক্ত সাপের নখগুলো হবে একদিন পথ পার হওয়ার সময়ের মতো দূরত্ব। সেই সাপের আওয়াজ হবে বজ্রপাত আওয়াজ এর মত এক বিকট শব্দ । সেই সাপটি বেনামাজিকে বলতে থাকবে তোমার রব আমাকে এখানে পাঠিয়েছে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে যেন আমি তোমাকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ছোবল মারতে থাকি।
বেনামাজি ব্যাগ থেকে হাশরের ময়দানে যে তিনটি শাস্তি দেওয়া হবে তা নিচে দেওয়া হলঃ
- একজন ফেরেশতা সেই বেনামাজী ব্যক্তিকে দুই পা উপরে এবং মাথা নিচু করে হাশরের ময়দানে নিয়ে যাবে।
- বেনামাজির ওপর মহান আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হয়ে থাকবেন।
- বেনামাজি ব্যক্তিকে জাহান্নামে দিয়ে দেওয়া হবে এবং তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করানো হবে।
প্রিয় পাঠক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানিয়েছি। আশা করি সংক্ষেপে আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন। উপরোক্ত শাস্তি ছাড়াও আরো ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে। এর জন্য আপনারা যারা নামাজ পড়েন না তারা এখন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে দেন। কেননা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি দুনিয়াতে, কবরে এবং হাশরের ময়দানে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি
প্রিয় পাঠক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস উপরুক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি। এবার চলুন আমরা নিম্নে শুধুমাত্র এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে জেনে নিই। এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি নিম্ন দেওয়া হলঃ
আমরা অনেকে আছি যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে অলসতা করি। আবার অনেকে আছে যারা এক ওয়াক্ত পড়ে তো আর এক ওয়াক্ত পড়ে না। এমন ব্যক্তিদের শাস্তি ও অনেক ভয়াবহ। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, ৫ ওয়াক্ত নামাজের ভেতরে যদি কেউ এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করে তাহলে সেই ব্যক্তির আশি ছোকবা জাহান্নামে থাকবে।
অর্থাৎ আমরা যদি এই আসি ছোকবা কে যদি দুনিয়ার বছর হিসাবে ভাবি তাহলে দুনিয়ার ৮০ বছর সমান ১ ছোকবা। তাহলে আমরা যদি ৮০ ছোকবাকে দুনিয়ার 80 বছর কে দিয়ে গুণ করি তাহলে ১৬০০ অর্থাৎ এক হাজার ছয়শত বৎসর দোযখে থাকতে হবে। আর যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ভেতরে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে না তারা সারা জীবন দোযখের আগুনে পুড়তে থাকবে।
নামাজ না পড়ার দুনিয়ার শাস্তি
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের নামাজ না পড়ার দুনিয়ার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। প্রিয় পাঠক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার জন্য দুনিয়াতে ছয়টি আজাদ দিয়ে থাকেন মহান আল্লাহ তায়ালা। সেই ছয়টি আযাব কি কি নিম্নে দেওয়া হলোঃ
আরো পড়ুনঃ আশুরার ছুটি ২০২৩ বাংলাদেশ - মহরম এর ছুটি ২০২৩
- বেনামাজি ব্যাক্তি দুনিয়ার জীবনের কোন ধরনের বরকত হবে না।
- মহান আল্লাহতালা বেনামাজির চেহারা থেকে নেক ব্যক্তির চিহ্ন তুলে নিবে।
- বেনাবাজি ব্যক্তি যদি কোন ধরনের যে বা যাহার নেক কাজ করবে সে কোন ধরনের সওয়াব পাবে না।
- বেনামাজির দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনোভাবেই কবুল হবে না।
- বেনামাজি ব্যক্তির ওপর মহান আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতা অসন্তুষ্ট হয়ে থাকবেন।
- বেনামাজি ব্যাক্তি ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকবেন।
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে না সে উপরোক্ত শাস্তিগুলো দুনিয়াতেই ভোগ করবেন। দুনিয়াতেও বেনামাজি ব্যাক্তিকে কেউ ভালো চোখে দেখবে না। এর জন্য যত সম্ভব এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন এবং অন্যকে সাহায্য করুন।
ফজরের নামাজ না পড়ার শাস্তি
একটি দিনের শুরুতে অর্থাৎ ফজরের নামাজ না পড়লে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, “নবী ও হিদায়েত প্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারী হলো। সুতরাং তারা গাই নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোন ধরনের জুলুম করা হবে না”। ( মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০ )
অন্য একটি আয়াতে এসেছে যে, কেয়ামতের দিনে জাহান্নামিদের প্রশ্ন করা হবে- ‘কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? বেনামাজি ব্যক্তিরা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদেরও খাবার দিতাম না, বরং আমরা সমালোচনা কারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। আর এভাবে হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল’। ( সূরামুদ্দাসসির, আয়াত: ৩৮-৪৭ )
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন,“কোন ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়াই। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল” ( কাফেরের মত কাজ করলো )। (মুসলিম, হাদিস: ৮২, তিরমিজি, হাদিস;২৬১৯ )
সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ নামাজ ছেড়ে দিল তার প্রতি আল্লাহ তাআলার কোন জিম্মাদারী থাকে না। আল্লাহ তাআলা তার উপর থেকে সকল জিম্মাদার এবং রক্ষণাবেক্ষণ তুলে নেয়। উমর (রাঃ) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগ কারী নির্ঘাত কাফের’। ( বায়হাকি, হাদিস: ১৫৪৯, ৬২৯১ )
সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে না সে অনেক বড় পাপ করলো। আল্লাহ তাআলা তার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে গেল। সে কোন ধরনের সফলতা অর্জন করতে পারবে না।ফজরের নামাজ যে ব্যক্তি আদায় করবে না আল্লাহতায়ালা তাকে অনেক ভয়াবহ শাস্তি দিবে। তাই আল্লাহ তা'আলা আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক।
মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি
আমি তোর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি অনেক ভয়াবহ। যে ব্যাক্তি এই দুনিয়াতে নামাজ না পড়ে মারা গেল সে ব্যক্তি কোথাও শান্তি পাবে না। আল্লাহ তাআলা তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি প্রদান করবে। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে না সে দুনিয়াতে, কবরে এবং হাশরের মাঠে শাস্তি ভোগ করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যে ব্যক্তি পড়লো না সেই ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা নিজে শাস্তি দিবেন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩
কেননা আল্লাহ তাআলা শুধু আমাদেরকে তার এবাদত এবং নবী রাসূলগণের দেখানো পথে চলার জন্য পাঠিয়েছেন। আমরা যদি আল্লাহতালার দেখানো পথে না চলি তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কঠিনতম শাস্তি পেতে হবে। তাই পরিশেষে বলা যায় মৃত্যুর পর নামাজ না পড়ার শাস্তি অতি ভয়াবহ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url