নামাজ না হওয়ার কারণ - নামাজ কবুল হওয়ার লক্ষণ
সূচিপত্রঃ নামাজ না হওয়ার কারণ
নামাজ কি কারনে ভঙ্গ হয়
আমরা সর্বপ্রথম জানবো নামাজ কি কারনে ভঙ্গ হয় এবং নামাজ ভঙ্গ আসলে কি। নামাজ কি কারনে ভঙ্গ হয় সে সম্পর্কে যদি আমরা সংজ্ঞা হিসেবেও বলি তাহলে বোঝা যায় যে নামাজ পড়া শেষ করার পর আমরা যদি সম্পূর্ণভাবে নামাজ আদায় না করি এবং অনেক অজান্তে নামাজের নিয়ম না মেনে নামাজ পড়ি তাহলে আমাদের নামাজ ভেঙ্গে যাবে অর্থাৎ ভঙ্গ হবে। নামাজ পড়া অবস্থায় যেগুলো কাজ নামাজ হয় না বা নামাজ নষ্ট হয় সেগুলো হলো নামাজ ভঙ্গের কারণ।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা বিস্তারিত জানুন
আমরা নামাজ পড়ার সময় অনেক সময় অনেক কিছু চিন্তা করি কিন্তু নামাজ পড়ার সময় এগুলো কোন কিছু চিন্তা করা যাবে না সব সময় নামাজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নামাজ পড়া অবস্থায় যদি আপনার কোন খারাপ চিন্তা আসে তাহলে আপনার চিন্তা করতে হবে যে, আপনি সামনে আল্লাহকে সিজদা দিচ্ছেন ডানে জান্নাত এবং বামে জাহান্নাম ও পিছে দাঁড়িয়ে আছে আজরাইল। এইরকম ভাবে চিন্তা করলে আপনার কোন খারাপ মানসিক চিন্তা আসবে না। তাহলে আপনি সম্পূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
নামাজ ভঙ্গ হওয়ার কয়টি কারণ
আপনি যে একজন মুসলমান ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জানা প্রয়োজন যে নামাজ শ্রেষ্ঠতম কাজ। আল্লাহতালা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন নামাজ পড়ার জন্য এবং মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার ও মানুষকে ইসলামের পথে আনার জন্য। একজন ব্যক্তি যদি মুসলমান হয়ে থাকে তাহলে সে অবশ্যই কালেমা জানে কারণ কালেমা হল নামাজের আগের স্থান এবং অর্থাৎ প্রথম স্তম্ভ এবং দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো নামাজ। তাই আমাদের নামাজ পড়ার সময় ধ্যানের সহিত নামাজ আদায় করতে হবে।
আপনি যখন নামাজে দাঁড়াবেন তখন আপনার খুব দ্রুত নামাজ পড়া যাবে না। একেবারে আস্তে আস্তে মনোযোগ সহিত নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ ভঙ্গের কারণ হলো ১৯ টি। এগুলো এগিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত নামাজ আদায় করব মনোযোগ সহিত তাহলে আল্লাহতালা আমাদের নামাজকে কবুল করতে বাধ্য হবে ইনশাহ্আল্লাহ। নামাজ অনেক কারণে ভঙ্গ হতে পারে কিন্তু আলেমদের মতে ১৯ টি কারণে সাধারণত নামাজ ভঙ্গ হয়ে থাকে চলুন আমরা নিম্নে অনুষ্ঠিত সম্পর্কে জানব। নামাজ না হওয়ার কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো।
নামাজ ভঙ্গের ১৯ টি কারণ সম্পর্কে
নামাজ পড়া অবস্থায় কথা বলাঃ আপনি যখন নামাজরত অবস্থায় থাকবেন তখন কোন দিকে তাকানো যাবেনা এক ধ্যানে সিজদার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এবং নামাজের মধ্যে কোন প্রকার কথা বলা যাবে না। আপনি যদি নামাজের অবস্থায় কথা বলেন তাহলে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন না এর ফলে নামাজ শুদ্ধভাবে পড়তে পারবেন অর্থাৎ নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
নামাজের মধ্যে সালাম দেওয়াঃ নামাজ পড়ার মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি আপনার সামনে এসে থাকে তাহলে আপনাকে নামাজেই থাকতে হবে যদি নামাজরত অবস্থায় কাউকে সালাম দেন তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
নামাজের মধ্যেও শব্দ করাঃ নামাজে থাকা অবস্থায় কোন ধরনের শব্দ করা যাবে না। যেমন অনেক সময় নামাজ অবস্থায় মশাতে কামড়াতে পারে কিন্তু আপনাকে উহ আহ শব্দ করা যাবে না তাহলে এরকম ধরনের শব্দের নামাজ ভঙ্গ হবে।
অতিরিক্ত জোরে কাশি দেওয়াঃ নামাজ পড়া অবস্থায় যদি আপনি অট্ট হাসাহাসি করেন বা বিনা অজরে কাশি দেন তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আপনার খুব প্রয়োজন ছাড়া নামাজের মধ্যে কাছেই দিবেন না।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে হাদিস
আমলের সময় কাসির করাঃ আলেমরা বলেছেন নামাজরত অবস্থায় যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণ নড়াচাড়া করেন অথবা শরীরের অঙ্গভঙ্গি করেন তাহলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। এমন কোন অঙ্গভঙ্গি করবেন না যাতে দূর থেকে মানুষ যদি দেখতে পায় যে আপনি নামাজরত অবস্থায় আছেন কিন্তু সে বুঝতে পারছে না যে আপনি নামাজে নাই এরকম ধরনের অঙ্গভঙ্গি করা নিষেধ।
বেদনার সুরে কাদাঃ আপনার কোন ধরনের বিপদ হয়েছে বা নামাজরত অবস্থায় মনে পড়ছে তাহলে আপনার অতিরিক্ত জোরে বা এমনিতে কোন প্রকার ভাবেই নামাজরত অবস্থায় কাঁদা যাবে না নাহলে আপনার নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
তিন তাজবি শতর খোলাঃ কাপড় পরার পর যদি আপনি নাভীর নিচে এবং হাঁটুর উপর পর্যন্ত পরিধান করেন সে অবস্থায় আপনার নামাজ হবে না। আপনাকে নাভির উপরে এবং হাঁটুর নিচে পর্যন্ত কাপড় থাকতে হবে।
মুক্তাদী ব্যতীত লোকমাঃ আপনি যদি জামাতের শহীদ নামাজ পড়েন তাহলে আপনার মুক্তা দিবে দ্বিতীয় লোকমা দেওয়া নিষেধ।
সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদঃ কেউ যদি সুখের কথা অথবা দুঃখের কথা বলেনা মাঝে থাকা অবস্থায় কোন ধরনের উত্তর নেওয়া যাবে না।
নাপাক স্থানে সেজদাঃ আপনি যেই স্থানে সিজদা দিবেন ওই স্থান পুরস্কার থাকতে হবে।
কিবলামুখী থাকাঃ নামাজে দাঁড়ালে কিবলামুখীভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আপনি যদি অন্য কোন দিকে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েন তাহলে নামাজ হবে না।
নামাজে দেখে তেলাওয়াত করাঃ নামাজ পড়ার সময় কুরআন শরীফ দেখে তেলাওয়াত করা যাবে না। আপনি যেগুলো সূরা মুখস্ত করেছেন না দেখে পড়তে হবে।
নামাজের মধ্যে অট্টহাসিঃ নামাজে দাঁড়িয়ে অট্টহাসি আসা যাবেনা।
নামাজে উত্তর দেওয়াঃ আপনি যদি নামাজে থাকেন সেই সময় যদি কেউ সালাম দেয় এবং কেউ যদি হাঁচি দেয় তাহলে উত্তর নেওয়া যাবে না।
কোন কিছু পান করাঃ নামাজে থাকা অবস্থায় মুখের ভেতর কোনো কিছু থাকলে সেগুলো বের করে নামাজে দাঁড়াতে হবে এবং নামাজের মধ্যে কোন কিছু খাওয়া যাবে না।
ইমামের আগে দাঁড়ানোঃ জামাতের শহীদ নামাজ পড়লেই ইমামের পিছনে দাঁড়াতে হবে। তার সামনে দাঁড়িয়ে যদি আপনি নামাজ পড়েন তাহলে নামাজ হবে না।
নামাজ মাকরুহ হওয়ার কারণ
- নামাজে থাকা অবস্থায় শরীরের কাপড় বা অঙ্গ দিয়ে কোন ধরনের নাচানাচি করা।
- আপনি পরিষ্কার জায়গায় সেজদা দিবেন ওই জায়গায় যদি কোন কিছু পড়ে ওই অবস্থায় সরানো।
- শরীরে কোন অঙ্গ ফুটানো।
- কোমরে হাত রাখা।
- কিবলামুখী হয়ে থাকতে হবে। কোন দিকে ডানে বা বামে তাকানো।
- সিজদা দেওয়ার সময় দুই হাত উঁচা না রাখলে নামাজ মাকরু হবে।
- সেজদার সময় দুই বাহু উচা রাখতে হবে।
- হাতের কোন ইশারা করা।
- ফরজ নামাজের সময় আসনে বসা।
- এমন কোন কাপড় পড়া যাবে না যাতে বারবার ঠিক করতে হয়।
- কাঁধে কাপড় রেখে নামাজ পড়া।
- অতিরিক্ত পরিমাণ হাঁচি বা হাম তুললে মাকরূহ হবে।
- শরীরের অলসতা করা।
- নামাজরত অবস্থায় চোখ বন্ধ করা।
- চুলের ভাজ বা চুলে হাত দেওয়া।
- খোলা মাথায় কোন নামাজ পড়া।।
- নামাজরত অবস্থায় তাজবীদ গণনা করা।
- ইমামের পিছনে সবারে দাঁড়াতে হবে।
- ইমাম সাহেব অতি স্থানে এবং সমস্ত লোক চেয়ে দাঁড়ানো যাবে না।
- জামাতের সহিত নামাজ পড়ার সময় পিছনে তাকানো যাবে না।
- নামাজরত অবস্থায় কাপড় পরিধান করা।
- একদম স্থির হয়ে নামাজ না পড়লে।
নামাজ ভঙ্গের কারণ আল কাউসার
মুছলে ব্যক্তিদের অনেকেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে চেয়ারে কি ইচ্ছা দিন নামাজ পড়া যাবে। আপনি যদি অসুস্থ না হন বা আপনার যদি কোন ধরনের মাজার বা মেরুদন্ডের কোন ধরনের সমস্যা না থাকে আপনি ইচ্ছা শহীদ চেয়ার তাহলে নামাজ পড়া ভঙ্গের কারণে দেখে নিয়ে যাবে কারণ একজন ব্যক্তি যদি সুস্থ অবস্থায় আপনার পরেও সে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ে তাহলে তার নামাজ ভঙ্গ হবে কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে আপনি যদি সুস্থ থাকেন। সে অবস্থায় যদি চেয়ারে বসে নামাজ পড়েন তাহলে নামাজ হবে না।
কারণ একজন ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় থাকে সে বসে যদি নামাজ পড়া ক্ষমতা থাকে তাহলে বসে নামাজ পড়বে আবার সে যদি বসে নামাজ পড়ার ক্ষমতা না থাকলে তাহলে শুয়ে থেকে নামাজ আদায় করবে। কারণ একজন মুসলমান ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ।
নামাজ কবুল হওয়ার লক্ষণ
আপনি প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন কিন্তু আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, আপনার নামাজ হচ্ছে কিনা বা নামাজ কবুল হওয়ার লক্ষণগুলো আপনি জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি পড়ুন। আমরা উপরোক্ত নামাজ না হওয়ার কারণ সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেছি এখন জানবো নামাজ কবুল হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে। আপনি যদি আল্লাহতালার জন্য নামাজ পড়েন তাহলে আল্লাহতালা তৌফিক দান করবেন। নামাজ পড়ার সময় যদি আপনার আনন্দ হয় যে হ্যাঁ এখন আমাকে নামাজ পড়তে হবে এরকম আনন্দ আসে করেন।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের নামাজের সঠিক নিয়ম - মেয়েদের নামাজের সঠিক নিয়ম জানুন
আপনি যদি এশার সালাত আদায় করার পরে অজয়ের সালাত আদায় করতে পারেন তাহলে মনে করবেন যে আপনার নামাজ কবুল হচ্ছে। এর মধ্যে যদি আপনি আনন্দ অনুভব করেন এবং কোন ধরনের সাহস অনুভব করেন তারপরে আপনি কোন খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বাধা মনে করেন তাহলে মনে করবেন কবুল হচ্ছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url