ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি - নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণ
সূচিপত্রঃ ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি
ওযু কি কি কারনে করতে হয়
ওযু হল সর্বমোট তিন প্রকার। এই তিন প্রকার হলো ফরজ, ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব। একজন ব্যক্তির যদি ওজু না থাকে তাহলে চার ভাবে তার অজু করা ফরজ। আবার অনেক সময়ে ওযু ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব হয়ে থাকে। চলুন আমরা জেনে নেই কখন ওযু ফরজ হয় এবং ওয়াজিব মোস্তাহাব কখন হয়।
আরো পড়ুনঃ নামাজ ভঙ্গের কারণ ও অজু ভঙ্গের কারণ জেনে নিন
অজু ফরজ হওয়ার কারণ
আপনি যে ধরনের নামাজ পড়েন না কেন, আপনার জন্য ওযু ফরজ। কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় সে ব্যক্তি জানাজায় যাওয়ার জন্য আপনার ওযু করা ফরজ। তিলাওয়াতের জন্য যখন আপনি তিন সিজদায় যাবেন তখন আপনাকে ওযু করতে হবে। হাদিস নং ৪৩৫। আপনি যখন কোরআন তেলাওয়াত করতে যাবেন তখন ওযু করা ফরজ কারণ কোরআন হলো একটি পবিত্র জিনিস। পবিত্র স্থানে কোন জায়গায় যদি কোরআন তেলাওয়াত লেখা থাকে তাহলে ওটা ছোয়ার জন্য আপনাকে ওযু করার প্রয়োজন রয়েছে কারণ ওই সময় ওযু ফরজ।
অজু ওয়াজিব হওয়ার কারণ
অজু ওয়াজিব হওয়ার কারণ শুধু মাত্র একটি। আপনি যখন কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন তখন অজু ওয়াজিব। হাদিস হলো ৮৩৩।
অজু মুস্তাহাব হওয়ার কারণ
আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন পবিত্রতার সাথে ঘুমাবেন। পবিত্রতার সাথে ঘুমানোর জন্য ওযু করার প্রয়োজন রয়েছে আর সেই সময় ওযু মুস্তাহাব। আপনি যখন জাগ্রত হবেন তখন কিন্তু ওযু মুস্তাহাব না তখন সুন্নত পালন করা হবে। হাদিস নং ৫৮৫। আপনি কোন কাজ করেন বা নাই করেন অজু করে থাকা মুস্তাহাব। এগুলো হলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এর বাইরে ও আরো অনেক কারণে অজু মুস্তাহাব হয়ে থাকে।
অজুর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র আল্লাহতালা ইবাদত করার জন্য। এবং আমাদের জীবন যাপন করার জন্য আল্লাহতালা সবকিছু উপায় দেখিয়ে দিয়েছেন। আপনি ২৪ ঘন্টা চলাফেরা করেন কথায় আছে মুসলমানের ২৪ ঘন্টায় বন্দেগি। আপনি যে কাজ করেন না কেন এবাদত অনুযায়ী করলে আপনার ওই কাজটা ইবাদতের সাথে হবে। কিন্তু সব ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হল সালাত অর্থাৎ নামাজ আদায় করা। আপনি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকার জন্য আপনার সর্বপ্রথম প্রয়োজন ওযু করা।
অজু করার মাধ্যমে আপনি নামাজ পড়তে পারবেন কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন আবার হজ্জে মক্কায় তাওফ করতে পারবেন। আপনি যখন আল্লাহর নাম নিয়ে নামাজে দাঁড়াবেন তখন আপনার সর্বপ্রথম অজু করতে হবে। ওকবা ইবনে আমির রহমতউল্লাহ থেকে বর্ণিত, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একজন মুসলমান ব্যক্তি উত্তম ভাবে ওযু করার পর খুঁজবো লাগিয়ে মন দিয়ে দুই রাকাত যদি নামাজ পড়ে তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। মুসলিম।
উলঙ্গ হলে কি ওযু নষ্ট হয়
আমাদের মনের মধ্যেও প্রশ্ন জাগতে পারে যে ওযু করার পরে উলঙ্গ হলে কি ওযু নষ্ট হয় সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। আপনি যখন গোসল করার সময় পরিপূর্ণভাবে আপনার সমস্ত শরীর ধৌত করবেন এবং অজু করবেন সেই সময় আপনি উলঙ্গ হয়ে থাকলেও অজু হবে কারণ ওযু ভঙ্গের মধ্যে আর উলঙ্গ মধ্যে কোন সম্পর্ক থাকে না। আপনি যখন গোসলখানায় উলঙ্গ হয়ে গোসল করবেন তখন আপনার গোসলখানা যাওয়ার আগে দোয়া পড়ে ঢুকতে হবে যেন ফেরেশতারা আপনি উলঙ্গ হলেও না দেখতে পাই।
আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা বিস্তারিত জানুন
আপনি যখন উলঙ্গ হয়ে গোসল করবেন তখন আপনার পবিত্রতা কথা আসবে উলঙ্গ হয়ে গোসল করলে এরপর আপনি যখন ওযু করে নিবেন তখন আপনার পবিত্রতা অর্জন হবে তাই গোসল করার পর আপনি যদি কাপড় পরিধান করেন তার পরিবর্তে যদি আবার উলঙ্গ হয়ে যান তাহলে আপনার ওযু ভেঙ্গে যাবে।
ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি
এখন আমরা আলোচনা করব ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি সেই সম্পর্কে। চলুন নিম্নে আমরা ৭টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি। ওযু ভঙ্গের এই ৭টি কারণ সম্পর্কে নিম্নে দেওয়া হলঃ
আপনার শরীরে পেচ্ছাপ পায়খানার অঙ্গ দিয়ে যদি কোন কিছু বের হয় অর্থাৎ পেশাব বা বায়ু বা পায়খানা বের হলে আপনার ভেঙ্গে যাবে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আপনার শরীরের কোন অঙ্গ দিয়ে যদি কোন কিছু বাহির হয় তাহলে আপনার ওযু ভেঙ্গে যাবে। সে সময় আপনি অজু করে নেবেন। কুবরা লিলবাইহাকি ৫৬৮।
শরীর দিয়ে যদি পুঁজ, রক্ত অথবা পানি বাহির হলে ওযু ভেঙ্গে যায়।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু নাক দিয়ে যখন রক্ত বাহির হতো সে সময় তিনি পুনরায় আবার অজু করতেন। মুয়াত্তা মালিক ১১০।
ওযু অবস্থায় থাকার পরে মুখ ভর্তি করে যদি বমি হয়, তাহলে ওযু ভেঙ্গে যাবে। কোন ব্যক্তির যদি নাক দিয়ে রক্ত এবং বমি হয় তাহলে আবার পুনরায় গিয়ে অজু করে নিতে হবে।
থুতু অথবা কফের সঙ্গে রক্ত বাইর হওয়া।
হাসান বসরী রহমতউল্লাহ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তির মুখ দিয়ে কফ ফেলার সময় অথবা থুতু খেলার সময়ের রক্ত বাহির হয় তাহলে তাকে আবার পুনরায় ওজু করতে হবে। মোসান্না ইবনে আবি শাইবা ১৩৩০।
চিত হয়ে ঘুমালে অথবা আপনি যদি কোন জায়গায় ঢিল না দিয়ে ঘুমিয়ে যান তাহলে ওযু নষ্ট হয়ে যাবে।
নামাজে যদি সেজদা অবস্থায় ঘুমিয়ে যান তাহলে অজু নষ্ট হয় না কিন্তু আপনি যদি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে যান তাহলে আপনার ওযু নষ্ট হয়ে যাবে। আবু দাউদ ২০২।
পাগলামি করা অথবা অচেতন হওয়া
হাম্মদ রহমতুল্লাহ বলে, যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পাগলামি করে তাহলে তাকে আবার সুস্থ হয়ে ওযু করতে হবে।
জামাতে নামাজে দাঁড়িয়ে বা বাসায় নামাজে দাড়িয়ে অট্টহাসি দেওয়া।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছে যে কোন ব্যক্তি যদি নামাজে দাঁড়ানোর পর অট্টহাসি দেয় তাহলে তার পুনরায় অজু করে আবার নামাজ আদায় করতে হবে। তারা কুতনি ১/১৫৬।
বায়ু বের হওয়ার কারণে কি ওযু ভাঙ্গে
নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণ
আমরা উপরোক্ত ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি এ সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। পুরুষের যেমন অজু ভঙ্গের কারণ রয়েছে ঠিক তেমনি নারীদেরও অজু ভঙ্গের কারণ রয়েছে। চলুন আমরা নিম্নে নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নিন। নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণ হলো ৭টি।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের নামাজের সঠিক নিয়ম - মেয়েদের নামাজের সঠিক নিয়ম জানুন
- প্রস্রাব বা পায়খানা দার দিয়ে কিছু বাহির হলে।
- মুখ ভর্তি বমি করলে।
- যে কোন অঙ্গ দিয়ে পুজ, রক্ত অথবা পানি বাহির হওয়া।
- থুথু ফেলার সময় সমান ভাবে রক্ত বাইর হওয়া।
- চিৎ হয়ে গভীরভাবে ঘুমালে।
- নামাজের মধ্যে অট্টহাসি।
- জ্ঞান হারানো অথবা মাতাল ও পাগল হলে।
শেষ কথাঃ ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি
আজকেরে পোস্টে ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি কি কি এই সম্পর্কে আলোচনা করেছে এবং নারীদের ওযু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি অজু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানতে চান তাহলে আপনি এই পোস্টটি সম্পূর্ণভাবে পড়লে আপনার উপকারে আসবে। এই পোষ্টের মধ্যে কিছু না জানা তথ্যসহ সবকিছু জানানো আছে। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url